স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে - স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে এবং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ে।অনেকেই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বলতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিরাপত্তা কে বুঝে থাকেন। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা মূলত কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের নিরাপত্তা কে বোঝানো হয়ে থাকে। এই পোস্টে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তাহলে চলুন আর দেরি না করে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি গুলো কি কি এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে?

স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বলতে কোম্পানীর কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঝুঁকিমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং এ সম্পর্কিত সকল আইন মেনে চলাকেই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বলে। একটি কোম্পানিতে নিয়োজিত সকল কর্মীদের সুস্বাস্থ্য ও কাজের নিরাপত্তা প্রদান করাকেই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বলতে পারি।

একটি কারখানার কর্মীদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই ধীরে ধীরে কারখানার উন্নতি সাধন হবে।

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি এর মূল উদ্দেশ্য কোম্পানীতে নিয়োজিত সকল কর্মীর সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুষ্ঠ সুন্দর ও পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা সঠিকভাবে কাজে পরিণত করাই এর মূলনীতি।


স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি কথাটি শুনে আমরা বুঝতে পারছি এই নীতিমালাটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরী স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা দুটি আলাদা আলাদাভাবে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

১। স্বাস্থ্য নীতিমালা।

২। নিরাপত্তা নীতিমালা।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি

বাংলাদেশ শ্রম বিধি-২০১৫ইং মোতাবেক বিধি ৪০ থেকে ৫২ এর মধ্যে স্বাস্থ্য রক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকগুলি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত-২০১৩ইং) এর ধারা ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত কিছু স্বাস্থ্য নীতিমালা রয়েছে।শ্রমিকদের জন্য একটি বাস্তব সম্মত স্বাস্থ্য নীতিমালা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিচে স্বাস্থ্য নীতিমালা গুলো উল্লেখ করা হলো।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | পরিস্কার পরিচছন্নতা (ধারা-৫১)ঃ

  • সুষ্ঠ কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ফ্যাক্টরীর আভ্যন্তরীণ ও পারিপার্শ্বিক পরিষ্কার পরিচছন্নতা একান্ত প্রয়োজন। ফ্যাক্টরীকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 
  • প্রতিষ্ঠানের মেঝে, কর্মকক্ষ, সিঁড়ি, যাতায়াতের পথ হতে প্রতিদিন ঝাড় দিয়ে ময়লা ও আবর্জনা উপযুক্ত পন্থায় অপসারণ করতে হবে।
  • প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষের মেঝে সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন ধৌত করতে হবে, এবং প্রয়োজনে ধৌত কাজে জীবাণু নাশক দিয়ে ধৌত করতে হবে।
  • প্রতিষ্ঠানের সকল আভ্যন্তরীণ দেয়াল, পার্টিশন, ছাদ, সিঁড়ি, যাতায়ত পথ রং অথবা বার্নিশ করা থাকিলে, প্রত্যেক তিন বছরে অন্ততঃ একবার পূণঃ বা বার্ণিশ করতে হবে।
  • উৎপাদন প্রক্রিয়া চলার সময় ফ্লোরের মেঝে ভিজে গেলে এবং পানি যতটুকু নিষ্কাশনযোগ্য সে পানি নিষ্কাশনের জন্য কার্যকর নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা।
  • অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি ১৪ মাসে অন্ততঃ একবার চুনকাম বা রং করতে হবে।
  • উল্লেখিত কার্যাবলী সম্পন্ন করার তারিখ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ও তাপমাত্রা (ধারা-৫২)ঃ

  • কক্ষের দেয়াল, ছাঁদ এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায় এবং যতদূর সম্ভব কম হয়। 
  • প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রাখিতে হইবে।
  • কক্ষের তাপমাত্রা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত ও আরামে বা স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারে।
  • যেখানে বিশেষ ধরনের কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্ত তাপ বৃদ্ধি পেতে পারে সেখানে এমন কার্যকর ও সুষ্ঠ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে কাজের ঘর থেকে গরম বাতাস বের হয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য উপযোগী স্বাভাবিক আবহাওয়া বজায় থাকে। কারখানার জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং কারখানার প্রতি ফ্লোরে তাপমান যন্ত্র স্থাপন করা।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | ধূলোবালি ও ধোঁয়া (ধারা-৫৩)ঃ 

  • প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন প্রক্রিয়া চলার কারণে যদি কোন ধুলা-বালি বা ধোঁয়া বা অন্য কোন দূষিত বস্তু এমন প্রকৃতির বা এমন পরিমাণে নির্গত হয় যে, উহাতে সেখানে কর্মরত শ্রমিকগণের পক্ষে স্বাস্থ্য হানির বা অস্বস্তিকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে কোন কাজের কক্ষে তা যেন জমতে না পারে এবং শ্রমিকের প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ-করতে না পারে ইহার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এই উদ্দেশ্যে যদি কোন নির্গমন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, তা হলে উহা উক্ত ধূলা-বালি, ধোঁয়া বা অন্য দূষিত বস্তুও উৎসের যতদূর সম্ভব কাছাকাছি স্থানে স্থাপন করতে হবে, এবং ঐ স্থান যতদূর সম্ভব ঘিরে রাখতে হবে। 
  • প্রতিষ্ঠানে কোন অন্তর্দহ ইঞ্জিন চালানো যাবে না উহার বাষ্পাদি নির্গমন পথ উম্মুক্ত বাতাসের দিকে হয়, এবং কোন অন্তর্দহ ইঞ্জিন কোন কর্ম কক্ষে চালানো যাবে না যদি না শ্রমিকগণের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে উহা হতে নির্গত এমন ধোঁয়া জমা না হওয়ার জন্য কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


স্বাস্থ্য নীতিমালা | বর্জ্য পদার্থ অপসারণ (ধারা-৫৪)ঃ 

  • উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন শিল্প বর্জ্য অপসারণ করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | কৃত্রিম আর্দ্রকরণ (ধারা-৫৫)ঃ

  • প্রতিষ্ঠানের বাতাসের আর্দ্রতা কৃত্রিম উপায়ে বৃদ্ধি করা,এবং ব্যবহৃত পানি সরকারী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা হতে অথবা অন্য কোন পানীয় পানির উৎস হতে সংগ্রহ করতে হবে, অথবা তা ব্যবহারের পূর্বে উপযুক্তভাবে শোধন করতে হবে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | অতিরিক্ত ভীড় (ধারা-৫৬)ঃ 

  • কর্ম কক্ষে শ্রমিকগণের স্বাস্থ্য হানি হয় এই প্রকার অতিরিক্ত ভীড় করা যাবে না।
  • কর্ম কক্ষে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্ততঃ ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • কর্ম কক্ষে সর্বোচ্চ কতজন লোক কাজ করতে পারিবেন,সেই সম্পর্কিত একটি নোটিশ ফটকের কাছে লটকিয়ে দিতে হইবে।
  • তা ছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, টেবিল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি এমন ভাবে রাখতে হবে যেন প্রতিটি শ্রমিক প্রয়োজনীয় খোলামেলা পরিবেশে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | আলোর ব্যবস্থা (ধারা-৫৭)ঃ 

  • কারখানায় প্রতিটি কর্ম কক্ষ আলো ঢোকার জন্য ব্যবহৃত কাঁচের স্বচ্ছ জানালার ব্যবস্থা রাখা।
  • প্রত্যেক কারখানায় প্রতি অংশে, যেখানে শ্রমিকগণ কাজ করেন বা চলাচল করেন, সেখানে পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করা।
  • আলোর উৎস থেকে সরাসরি উৎসারিত চোখ ঝলসানো আলোকচ্ছটা এবং শ্রমিকের চোখের উপর চাপ পড়তে পারে বা দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে এমন ছায়া সৃষ্টি হওয়া।
  • কর্ম কক্ষের বা স্থানের আলোক ব্যবস্থা মেঝ হইতে ১.০ মিটার উচ্চতায় কমপক্ষে ৩৫০ লাক্স (Lux) আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | পান করার পানি (ধারা-৫৮)ঃ

  • প্রত্যেক কারখানায় নিযুক্ত শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য সুবিধাজনক যথোপযুক্ত নির্দিষ্ট জায়গায় সর্বক্ষণ বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং সে ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।
  • পানি সরবরাহের স্থানকে বাংলায় “পান করার পানি” কথাগুলি স্পষ্টভাবে লিখে দিতে হবে।
  • পান করবার পানি স্থানটি কোন প্রতিষ্ঠানে শৌচাগার হতে ন্যূনতম ৬ মিটার (২০ ফুট) দূরত্বে স্থাপন করতে হবে।
  • যে প্রতিষ্ঠানে সাধারণত ২৫০ জনের অধিক শ্রমিক কাজ করে থাকেন উহার প্রতিটিতে প্রতি বৎসর ১ এপ্রিল হইতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকদের ক্যান্টিন, খাবার ঘর এবং বিশ্রাম ঘরে পান করার জন্য যে পানি সরবরাহ করা হয় উহাপানি ঠাণ্ডাকরণ যন্ত্র (Water Cooler) অথবা অন্য কোন কার্যকর পন্থায় ঠান্ডা করিয়া সরবরাহ করতে হবে। 
  • মাত্রাতিরিক্ত তাপ উদ্রেককারী যন্ত্রের সন্নিকটে কাজ করার কারণে শ্রমিকের শরীরে পানি শূণ্যতার সৃষ্টি হলে, ঐ সকল শ্রমিকের জন্য ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ (ধারা-৫৯)ঃ  

  • প্রত্যেক কারখানায়-শ্রমিকগণের জন্য তারা কারখানায় থাকাকালীন সময়ে সহজে ব্যবহার করতে পারেন এমন সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণ শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের ব্যবস্থা রাখা। 
  • শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষসমূহ যথোপযুক্তভাবে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে ময়লা পরিস্কারক অথবা জীবাণুনাশক অথবা উভয়টি দিয়ে সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • পুরুষ এবং মহিলা শ্রমিকদের জন্য পৃথক পৃথক শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের ব্যবস্থা রাখা। উপরোক্ত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষসমূহে উপযুক্ত আলোর ব্যবস্থা এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা এবং কোন শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের মাঝখানে খালি জায়গা বা বায়ু চলাচল ব্যবস্থাসহ যাতায়াত পথ ছাড়া শ্রমিকদের কাজের ফ্লোরের সংলগ্ন না রাখা। 
  • শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষসমূহ ইট সুরকি দ্বারা তৈরী করা। 

স্বাস্থ্য নীতিমালা | আবর্জনা বাক্স ও পিকদানী (ধারা-৬০)ঃ  

  • ধারা ৬০ অনুযায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের জন্য অন্তত একটি করে পৃথক আবর্জনা ও পিকদানি বাক্স রাখতে হবে।
  • পিকদানি বালু ভর্তি থাকতে হবে এবং উহার উপরে জীবানুনাশক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দিতে হবে।
  • পিকদানিগুলি প্রতি ৭ দিন অন্তর একবার খালি করে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং দৈনিক অন্তত একবার উপরের এক স্তর বালি অপসারণ করে পরিষ্কার করতে হবে। 
  • আবর্জনা বাক্স প্লাস্টিকের তৈরি ও ঢাকনাসহ থাকতে হবে এবং উহাতে প্রতিদিন জমাকৃত আবর্জনা অপসারণ করতে হবে ও উভয় ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করিতে হইবে। 
  • উক্ত পিকদানি ও আবর্জনা বাক্স কর্মকক্ষের দরজার সন্নিকটে স্থাপন করতে হবে এবং উহা এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাহাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় ও ময়লা আবর্জনা চোখে না পড়ে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা | প্রাথমিক চিকিৎসাঃ

ফ্যাক্টরীতে কর্মরত শ্রমিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১জন এমবিবিএস মেডিকেল অফিসার ও ২ মেডিকেল সহকারী এবং আলমারিতে পর্যাপ্ত ঔষধসহ একটি মেডিকেল রুম স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও প্রতি ১৫০ জন শ্রমিকের জন্য একটি করে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্স রাখতে হবে এবং প্রতিটি বক্সে ঔষধ/দ্রব্যাদি মজুদ রাখতে হবে। প্রতিটি ফাষ্ট এইড বাক্স-এ উল্লেখিত ঔষধপত্রের সাথে তাদের ব্যবহার বিধি লেখা থাকবে। প্রতিটি বাক্সের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রাথমিক চিকিৎসায় পারদর্শী কমপক্ষে ২ জন শ্রমিকের নাম ও ছবি বাক্সের উপরে/সুবিধাজনক স্থানে প্রদর্শিত হবে। ফ্যাক্টরীতে যে কোন অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনায় শ্রমিকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করবে।

নিরাপত্তা নীতিমালা | স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি

এখন আমরা দেখে নেবো স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি এর মধ্যে যত ধরনের নিরাপত্তা নীতি রয়েছে সেগুলো। ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরে যত ধরনের উৎপাদন করার মেশিন ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো ব্যবহারে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নিরাপত্তা নীতি এর মূল উদ্দেশ্য। তাই যত ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো ব্যবহারে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয় একই সাথে কারখানার পরিবেশ কতটা নিরাপদ সে বিষয়েও নিরাপত্তা নীতিতে আলোচনা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা নীতিমালা | অগ্নিকান্ড থেকে নিরাপত্তাঃ 

  • আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার এ্যালার্ম বা বেল বাজাতে হবে।
  • অগ্নিকান্ড থেকে নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কারখানায় স্বয়ং সম্পূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করা আছে যা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে।
  • ফ্যাক্টরীর আয়তন অনুযায়ী প্রতি ৫৫০ বর্গফুটের জন্য একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকবে যেগুলো প্রতি মাসে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং ফ্যাক্টরীর লক্ষ্যণীয় জায়গায় টানানো থাকবে।
  • ফ্যাক্টরীর কাজ চলাকালীন কোন অবস্থাতেই ফ্যাক্টরীর নির্গমন পথ বন্ধ রাখা যাবে না।
  • মাসে অন্তত একবার অগ্নি প্রতিরোধের অনুশীলনের মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে এই অনাকাঙ্খিত দূর্যোগের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
  • সকল চলাচলের রাস্তা, বর্হিগমন পথ ও লেনগুলি হলুদ ও লাল রং দিয়ে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
  • জরুরী বর্হিগমন পরিকল্পনা লিখিত ও স্কেচের মাধ্যমে উল্লেখ যোগ্য জায়গায় টানাতে হবে এবং সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সম্যক ধারনা থাকতে হবে।

নিরাপত্তা নীতিমালা | বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিঃ  

  • সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ নিরাপদভাবে করতে হবে।
  • কোথাও কোন খোলা তার, ইনসুলিশন টেপযুক্ত তার থাকবে না।
  • কোথাও কোন বাতি ফিউজ হলে তা সাথে সাথে বদলাতে হবে যেন আলোর স্বল্পতা না হয়।
  • মেইন সুইচ বোর্ডগুলি যথাযথভাবে চিহ্নিত করে সেগুলো সব সময় Accessible (সুগম) রাখতে হবে যেন প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে কেউ বাধা প্রাপ্ত না হয়।
  • মেইন সুইচ বোর্ডের উল্লেখ যোগ্য সুইচগুলোর “ON” এবং “OFF” এর Direction মার্কিং করে রাখতে হবে। 
  • মেশিনের সাথে সংযুক্ত তার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক তার এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যেন অপারেটরদের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্থ না হয়।
  • সমস্ত এ্যালার্ম সিস্টেম যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেয়া অবস্থায় এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • বিদ্যুৎ চলে গেলে ফ্যাক্টরীতে পর্যাপ্ত আলোর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক Emergency Light এর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রতিটি বিদ্যুৎ লাইন বোর্ড অর্থাৎ MDB, SDB, Pannel Board-এর প্রতিটি লাইন অত্যন্ত সুন্দর, আলাদা, এমোনাইট শীট দ্বারা পৃথক করিতে হইবে। 
  • প্রতিটি বিদ্যুৎ লাইন বোর্ড অর্থাৎ MDB, SDB, Pannel Board-এর ভিতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে হবে। 
  • কোন ধরনের বাইপাস লাইন ও লুজ তার ব্যবহার করা যাবে না।
  • একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতিটি বিদ্যুৎ লাইন বোর্ড অর্থাৎ MDB, SDB, Pannel Board-এর লাইন পরিষ্কার, মেইনটেন্যান্স করতে হবে এবং রেজিষ্টার লাইন পরিষ্কার, মেইনটেন্যান্স করার তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
  • প্রতিটি বিদ্যুৎ লাইন বোর্ড অর্থাৎ MDB, SDB, Pannel Board-এর নীচে রাবার ম্যাট দিতে হবে।

নিরাপত্তা নীতিমালা | বৈদ্যুতিক বিপদ সম্পর্কে সতর্কতাঃ

  • প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন এবং সকল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যথাযথ আকৃতির এবং পর্যাপ্ত  শক্তিসম্পন্ন হতে হবে এবং এমনভাবে নির্মিত, সংরক্ষিত ও কার্যকর হতে হবে যেন উহা কোন ব্যক্তির দৈহিক ঝুঁকির কারণ না হয়।

নিরাপত্তা নীতিমালা | বিভিন্ন স্টোরঃ 

স্টোর ফ্যাক্টরীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। উৎপাদনের পূর্বে বিভিন্ন এক্সসেরিজ-এর যোগান ও মজুদ করে রাখতে হয়। মালামাল এমনভাবে রাখতে হবে যাতে কম জায়গায় অধিক মালামাল সুশৃংখলভাবে রাখা যায়। যেমন-

  • বিভিন্ন প্রকারের সুতা, গার্মেন্টস্-এর বডি এবং ডেমেজ বডি Pallet এর উপর Stack করে রাখতে হবে। স্থপিকৃত অথবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা যাবে না।
  • বায়ার অনুযায়ী এবং Style, Order ও Colour অনুযায়ী Stack করে রাখতে হবে। 
  • ডেমেজ বডি পৃথক Stack এ রাখতে হবে। Stack গুলি ৬ ফুট পর্যন্ত উঁচু রাখতে হবে।
  • Stack এর সারির মাঝখানে চলাচলের রাস্তা রাখতে হবে। 
  • প্রতিটি Stack এ Bin card থাকতে হবে। Accessories নির্ধারিত Rack এ গুছিয়ে রাখতে হবে।
  • প্রতিটি Rack এর মাঝখানে চলাচলের স্থান রাখতে হবে। 
  • কোন অবস্থাতেই Aisles Mark Ges Fire Extinguisher, Fire Hose, পানির ড্রাম, ইস্কেপ প্ল্যান ইত্যাদির রাস্তা কোন মালামাল রেখে বন্ধ করা যাবে না।
  • অপ্রয়োজনীয় কার্টুন, প্যাকেজ সামগ্রী প্রভৃতি জমিয়ে রাখা যাবে না। 
  • ফেব্রিক্স স্টোরে বিদ্যুৎ লাইন রাখা যাবে না।
  • প্রতিদিন কাজ শুরুর পূর্বে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

নিরাপত্তা নীতিমালা | ভবন, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কাঠামোর নিরাপত্তাঃ

  • বাস্তবায়নের সময় পরিদর্শক ভবন, পথ, যন্ত্রপাতি বা প্লান্টসহ উক্ত ধারায় উল্লিখিত বিষয়গুলি ব্যতীত কোন প্রতিষ্ঠানের কোন দেওয়াল, চিমনি, সেতু, সুড়ঙ্গ, রাস্তা, গ্যালারী, সিঁড়ি, র‌্যাম্প, মেঝে, প্লাটফরম, মাচা, রেলপথ বা বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক পদ্ধতির যানবাহন চালানোর রাস্তা বা অন্য কোন কাঠামো, উহা স্থায়ী বা অস্থায়ী যে রকমই হউক না কেন, বিবেচনায় আনিবেন যেন ইহা মানুষের জীবন বা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক না হয়।

নিরাপত্তা নীতিমালা | যন্ত্রপাতি ঘিরে রাখাঃ 

  • উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মানুষ দ্বারা চালিত। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে। গতি সম্পন্ন থাকার সময় এবং ব্যবহারের সময় প্রত্যেক কারখানায় নিম্নোক্ত যন্ত্রপাতিসমূহ পর্যাপ্ত নির্মাণ ব্যবস্থা দ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘিরে রাখতে হবে। প্রধান চালিকা যন্ত্রের প্রতিটি চলমান অংশ এবং প্রধান চালিকা যন্ত্রের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি ঘূর্ণায়মান চাকা।ঘূর্ণায়মান যন্ত্রপাতিসমূহ নিরাপদভাবে ঘিরে রাখতে হবে।ইলেকট্রিক জেনারেটর, মোটর ও রোটারী কনভার্টরের প্রতিটি অংশ,যেকোন যন্ত্রপাতির প্রতিটি বিপজ্জনক অংশ। 

নিরাপত্তা নীতিমালা | বিপজ্জনক যন্ত্রপাতির কাজে তরুণ ব্যক্তিদের নিয়োগঃ 

  • ১৮ বৎসরের নিচে কোন ব্যক্তিকে, পর্যাপ্ত শক্তি বা অন্য যে কোনভাবে চালিত বা চালককে সংকেত দেওয়ার জন্য চালিত হোক না কেন, নিয়োগ করা যাবে না;
  • যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এবং এসব দুর্ঘটনা থেকে সতর্কতা অবলম্বন সম্পর্কিত সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ না দেয়া পর্যন্ত কোন তরুণ শ্রমিককে কোন যন্ত্রে কাজ করতে দেয়া। 
  • যন্ত্রের কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ না পাওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের কাজ সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তির তত্ত্বাবধায়নে কাজ না করলে তাকে কাজ করতে দেয়া হয় না।

নিরাপত্তা নীতিমালা | যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং চলাচলের রাস্তাঃ

  • প্রতিষ্ঠানের কোন স্থানে যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে দেওয়াল হইতে যন্ত্রের দূরত্ব কমপক্ষে ১ মিটার বা (৩৯ ইঞ্চি) হতে হবে এবং স্থাপিত যন্ত্র বা যন্ত্রসারির পাশে কমপক্ষে ১ মিটার বা (৩৯ ইঞ্চি) প্রশস্ত চলাচলের রাস্তা থাকতে হবে।
উপরিউক্ত নীতিগুলো যেকোনো কারখানার নিরাপত্তা নীতি। শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো কারখানা স্থাপনের সময় অবশ্যই নিরাপত্তা নীতি গুলো মেনে কারখানা স্থাপন করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি এর উদ্দেশ্য

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি এর উদ্দেশ্য হল কারখানায় কর্মরত কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উদ্দেশ্য গুলো নিচে দেওয়া হলঃ

  • ফ্যাক্টরিতে কর্মরত সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা এবং স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা।
  • ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরে প্রতিটি বিভাগের বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়ে থাকে এসব বিভাগে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করা।
  • ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরে প্রতিটি বিভাগ এবং তার আশেপাশের যত এলাকা রয়েছে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখা।
  • শ্রমিকদের ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতিমালা মোতাবেক, সকলের জন্য হাসপাতাল ডাক্তার এর ব্যবস্থা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
  • ফ্যাক্টরি তে কর্মরত যত ধরনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ঘটনা যেমন অগ্নি দুর্ঘটনা বা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ইত্যাদি রধে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং নিয়মিত অনুশীলন ব্যবস্থা চালু রাখা।

শেষ কথাঃ | স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে | স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি

প্রিয় পাঠক আমরা এই পোস্টের একদম শেষ দিকে চলে এসেছি। আপনাদের মধ্যে অনেকেরই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি গুলো কি কি এর সম্বন্ধে পরিপূর্ণ ধারণা ছিল না তাদের সুবিধার্থে এই পোস্টে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাকে বলে, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি যেন আপনারা এই পুরো পোস্ট টি পড়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি গুলো সম্বন্ধে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়ে যান। এই পোস্ট টি শুধু শ্রমিকদের উপকারে আসবে এমন নয় যারা নতুন কারখানা স্থাপন করতে চান তারা এই পোস্ট টি পড়ে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি মেনে কারখানা স্থাপন করতে পারবেন।


পোস্টটি আপনার উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার প্রিয় বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে নিচের শেয়ার বাটনগুলো তে ক্লিক করে যেন তারাও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি গুলো জানতে পারে খুব সহজেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post