অটিজম রোগের লক্ষণ
বন্ধুরা আজকে আমি খুব ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। বিষয়টি হলো অটিজম রোগের লক্ষণ গুলো কি কি।অটিজম কি এবং অটিজম রোগের লক্ষণ গুলো কি কি তা জানা খুব ই জরুরি মায়েদের জন্য। এছাড়াও এই পোস্টের মাধ্যমে আরো জানতে পারবেন অটিজমের কারণ ,অটিজম এর বৈশিষ্ট্য ,অটিজম শিশুর খাবার,অটিজম কি ভালো হয় এগুলো সম্পর্কে।
অটিজম কি এবং অটিজম রোগের লক্ষণ গুলো কি কি।
- অটিজম কি ও অটিজম কত প্রকার?
- অটিজমের কারণ ।
- অটিজম এর বৈশিষ্ট্য ।অটিজম রোগের লক্ষণ ।
- অটিজম শিশুর খাবার।
- অটিজম কি ভালো হয়?
- শেষ আলোচনা:অটিজম রোগের লক্ষণ ।
অটিজম কি ও অটিজম কত প্রকার?
অটিজম বা অটিস্টিক শব্দটির সাথে আমরা সবাই ই কম বেশি পরিচিত । অটিজম কি ? তা জানেন না অনেকেই।অটিজম হলো একটি মানসিক বিকাশ ঘটিত সমস্যা যা স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও পরিবর্ধনজনিত অস্বাভাবিকতা। অর্থাৎ শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে জটিলতা দেখা দোয়া।ইংরেজিতে একে বলা হয় "নিউরো ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ভার"। এটি কোন রোগ নয়।
কেউ কেউ আবার মনে করেন অটিজম বংশগত রোগ। এটি কোনো বংশগত রোগ নয়। সাধারণত ৩ বছরের মধ্যেই শিশুর এই সমস্যা ধরা পড়ে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অটিজম ১০ বছরের মধ্যেও প্রকাশ পায়।
আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক শিশু দের মতো বেড়ে ওঠে না। তাদের আচরণ অঙ্গ ভঙ্গি একটি নির্দিষ্ট সিমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সামাজিক আচারণে দূর্বল হয়। পারস্পরিক যোগাযোগ এর সক্ষমতা তাদের কম থাকে। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বার বার করার প্রবণতা তাদের থাকে।
বিশ্বে সমস্ত বিকাশজনিত সম্যার মধ্যে অটিজম এর স্থান তৃতীয়।বাংলাদেশ সাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে জানা গেছে ঢাকা শহরের অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে দশমিক ৭ শতাংশ । অটিজম কি তা সম্পর্কে প্রত্যেকের ই ধারণা রাখা উচিৎ।
অটিজম কি তা সবাই কম বেশি জানলেও অটিজম কত প্রকার তা হয়তো জানেন না। অটিজম কি তা হয়তো ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন। চলুন এবার জেনে নিই অটিজম কত প্রকার।
অটিজম কত প্রকার:
৫ প্রকারের অটিজম রয়েছে । এগুলো হলো :
১.ক্লাসিক্যাল অটিজম।
২.এসপারজার সিনড্রোম।
৩.পারভেসিভ ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ভার নট আদার ওয়াইজ স্পেসিফাইড ।
৪.রেট সিনড্রোম।
৫.সিডিডি শৈশবকা লীন সমন্বয়হীনতার বিকৃতি।
এই ৫ প্রকার অটিজম বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন ভাবে দেখা দিতে পারে।এই ৫ প্রকারের অটিজম এর বৈশিষ্ট্য অটিজম এর বৈশিষ্ট্য বা অটিজম রোগের লক্ষণ রয়েছে যেগুলো আমরা পরবর্তীতে জানব।
অটিজমের কারণ
অটিজম কি ও অটিজম কত প্রকার তা আমরা এতক্ষণে জেনেছি। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই অটিজমের কারণ গুলো কি কি।
অটিজমের কারণ এখনো নিখুঁত ভাবে জানা যায় নি। অটিজমের কারণ নিয়ে এখন ও একেক জনের একেক রকম মত রয়েছে।
ধারণা করা হয় যে , কিছু জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণে অটিজম দেখা দিতে পারে।মানব কোষের অসংগতি পূর্ণ ক্রোমোজোমের কারণে ডাউন সিন্ড্রোম হয়ে থাকে। শিশুর ফ্রাগলি এক্স সিন্ড্রোম এবং অন্যান্য জেনেটিক ডিজঅর্ডার থেকে থাকলে অটিজম হতে পারে।ফ্রাগলি এক্স সিন্ড্রোম হলো এক ধরনের জেনেটিক ডিজঅর্ডার ।
শিশুর অভিভাবকদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য অত্যাধিক হলে ও অনেক সময় বাচ্চা অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও বাচ্চার রক্তে বায়োক্যামিক্যাল ইমব্যালেন্স হলে অটিজম হতে পারে।
গর্ভ কালীন সময়ে মা যদি তার দৈনন্দিন কাজে বা প্রয়োজনে পরিবেশগত কোনো বিষাক্ত বস্তু বা ভারী কোনো পদার্থ সেবন করে থাকে তাহলে সেই গর্ভবতী মায়ের সন্তানের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার গর্ভবতী মায়ের যদি ভাইরাল ইনফেকশনের পূর্বের ইতিহাস থেকে থাকে তাহলে তার সন্তানের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
হাম, মাম্পস এবং রুবেলা ভ্যাক্সিনের কারণেও শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এজন্য যেকোনো ভ্যাক্সিন গ্ৰহণের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে ভ্যাক্সিনের এক্সপায়ার ডেট আছে কিনা,ভ্যাক্সিনটি কোথা থেকে আসলো।
অটিজমের কারণ এখনো নির্দিষ্টভাবে জানা যায় নি। কিছু কিছু অটিজমের কারণ ডাক্তাররা ধারণা করেন। সেগুলো ই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
অটিজম এর বৈশিষ্ট্য ।অটিজম রোগের লক্ষণ
অটিজম রোগের লক্ষণ রয়েছে অনেক। বাচ্চার যেকোনো বয়সে অটিজম দেখা দিতে পারে।
৩ মাস বয়সী বাচ্চাদের অটিজম এর বৈশিষ্ট্য:
- উচ্চ শব্দে কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।
- চলমান বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয় না।
- বু বু শব্দ বা bubble করে না ।
- কাউকে দেখলে হাসে না বা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
- মুখের কাছে সে হাত নেয় না।
- নতুন কোন কিছু দেখার ক্ষেত্রে আগ্ৰহ থাকে না।
৭/৮ মাস বয়সী বাচ্চাদের অটিজম রোগের লক্ষণ:
- উচ্চ শব্দে বাচ্চা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। শব্দ কোথা থেকে আসছে সেটাও সে খোঁজার চেষ্টা করে না।
- সে তার কর্ম কান্ডের মাধ্যমে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে না।
- কাছের মানুষদের পেলে হাসবে না বা কোনো প্রকারের ভালোবাসা প্রকাশ করবে না।
- খেলাধুলার প্রতি কোনো আগ্ৰহ থাকবে না।
- কোনো কিছু আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবে না।
- কোনো কাজেই সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।
৯ মাস বয়সী বাচ্চাদের অটিজম এর বৈশিষ্ট্য :
- নিজের নামে কোনো প্রকারের সাড়া দিবে না।
- আপনার নির্দেশিত পয়েন্টে দৃষ্টিপাত করবে না।
- বাব,মা ,দাদা,দাদী এরকম বলে কাউকে ডাকবে না।
- এক হাত দিয়ে অন্য হাতে খেলনা পরিবর্তন করতে পারবেনা।
- পরিচিত লোক দের চিনবে না।
- পায়ের সাহায্যে ওজন বহন করতে পারবে না।
১ বছর বয়সী বাচ্চাদের অটিজম রোগের লক্ষণ:
- হামাগুড়ি দেবে না।
- কোনো শব্দ বলতে পারবে না।
- কোনো ছবি বা বস্তুকে নির্দেশ করে না।
- দাঁড়ানোর জন্য কোনো কিছুর সাহায্য নিবে না।
- কোনো প্রকারের অঙ্গ ভঙ্গি করে না।
- কোনো কিছু নিতে চাইবে না।
দেড় বছর বয়সী বাচ্চাদের অটিজম এর বৈশিষ্ট্য :
ঘড়ের কোন জিনিসের কাজ কি সেটা সে বুঝে না।যেমন: ঝাড়ু , টিভি, মোবাইল।
কারো কথা বা কাজ অনুকরণ করে না।
সর্বোচ্চ ৬ টি শব্দের বেশি শব্দ ব্যাবহার করতে পারে না।
হাঁটতে পারে না।
যেই কাজ গুলো আগে পারতো সেগুলো এখন পারছে না।
২ বছর বয়সী বাচ্চাদের অটিজম রোগের লক্ষণ:
হাঁটতে পারে না বা হাটলেও ঠিকভাবে পারে না।
১৫ টি শব্দের বেশি শব্দ ব্যাবহার করতে পারে না।
২ শব্দের বাক্য ব্যবহার ই পারে না।
কারো সাধারণ কথাও মান্য করে না ।
৩ বছর বয়সী বাচ্চাদের অটিজম এর বৈশিষ্ট্য:
অস্পষ্ট কথা বলে।
খেলনা দিয়ে খেলতে পারে না।
বন্ধুদের সাথে খেলার কোনো আগ্রহ নেই।
কারো সাধারণ কথাও মান্য করে না ।
চোখে চোখ রেখে কথা বলে না।তার একসময়ের নিজস্ব স্মৃতি ও ভুলে যায়।
অটিজম শিশুর খাবার।
অটিজমের আক্রান্ত শিশুদের একটি বর্ধিত সময়ের জন্য একটি কার্যের দিকে মনোনিবেশ করতে অসম্ভব হতে পারে। তাদের একটানা অনেকক্ষণ ধরে বসিয়ে হয়তো খাবার খাওয়ানো সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য তারা অনেক সময় দেখা যায় সঠিক পুষ্টি পায় না।
এসব বাচ্চারা যেই খাবারটি পছন্দ করে সেই খাবার টিই বার বার খায়। এজন্য এসব বাচ্চাদের বাইরের খাবার গুলোর সাথে পরিচয় না করানোই ভালো । এসব বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে তাই তাদের বাইরের খাবার না দেওয়াই ভালো।
অটিজম শিশুর খাবার গুলো ঘরের তৈরি হলেই বেশি ভালো হয়। অটিজম শিশুর খাবার তালিকা তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিবেন । কারণ চিনি তাদের কে অত্যাধিক হাইপার করে থাকে।
যেসব খাবারে তাদের গ্যাসের সমস্যা হয় সেসব খাবার এসব বাচ্চাদের না দেওয়াই ভালো। অনেক বাচ্চরা অটিজম শিশুদের খাবার গুলো জুস করে দেয়। এক্ষেত্রে জুস বানিয়ে না দেওয়ার চেষ্টা করবেন। খাবার গুলো বাচ্চা যদি চিবিয়ে বা চুষে খায় সেটা বেশি ভালো হবে।
বাচ্চা কে অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো।অটিজম শিশুর খাবার তালিকায় প্রতিদিন একটি করে ডিম রাখার চেষ্টা করবেন।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার অটিজম শিশুর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । তাই প্রতিদিন ই চেষ্টা করবেন অটিজম শিশুর খাবার তালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখার।
বাচ্চা দুধ খেতে না চাইলে দুধের তৈরি পায়েস, সুজি দিতে পারেন।চিনির বদলে বাচ্চা কে মধু দিতে পারেন। বাচ্চা কে রঙিন খাবার দিবেন যাতে সে খাবার দেখে খেতে চায়। বাচ্চার খাবার যেন টেস্টি হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাচ্চাকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার দিবেন না ।বা ফ্যাট জাতীয় খাবার কম দিবেন।অটিজম শিশুর খাবার তালিকা থেকে তেলে ভাজা শুকনো খাবার একেবারে ই বাদ দিতে হবে। এগুলো দিলে সে বাইরের খাবারের স্বাদ পেয়ে যাবে।
অটিজম কি ভালো হয়?
অটিজম কি ভালো হয়? সত্যি ই একটি চিন্তার বিষয় । একটি বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত হলে তার অটিজম কি ভালো হয়। চলুন তাহলে দেখে নেই।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে পুরোপুরি সুস্থ করে না তুলতে পারলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। চলুন উপায় গুলো দেখে নিই।
অটিজম কি ভালো হয়? ভালো করার উপায়:
শিশুর বাবা মা কে প্রশিক্ষণ নিতে হবে শিশুর সাথে কিরকম আচারণ করবে সে ব্যাপারে।
শিশুকে সামাজিক রীতি নীতি গুলো শেখাতে হবে।
অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে দিতে হবে।
শিশুকে যেকোনো কাজে উৎসাহ দেওয়া।
শিশুর ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও থেরাপি নেওয়া।
অটিজম কি ভালো হয়? তা নিয়ে আর ভাবতে হবে না আপনাকে। আপনার শিশুর সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে আপনার শিশুকে ভালো করে তুলত পারবেন।
শেষ আলোচনা:অটিজম রোগের লক্ষণ ।
আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি অটিজমের কারণ । অটিজম কি,অটিজমের কারণ, অটিজম এর বৈশিষ্ট্য ,অটিজম রোগের লক্ষণ ,অটিজম শিশুর খাবার,অটিজম কি ভালো হয় এগুলো সম্পর্কে।
আশাকরি পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং তাদের সবাইকে জানিয়ে দিবেন অটিজম রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে।
এরকম আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট পড়তে আমাদের অর্ডিনারি আইটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল। ধন্যবাদ।
Post a Comment